বাংলাদেশের বিলুপ্ত মাউস ডিয়ার খুদে হরিণ পাওয়া গেল ভিয়েতনামে
By Super Adminবিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে ৩০ বছর আগে কিন্তু সম্প্রতি ফিরে পাওয়া ভিয়েতনামের মাউস ডিয়ারের মতো ছোট হরিণ বাংলাদেশেও ছিল। বাংলাদেশে প্রাণীটি ছাগুলে লাফা, শোস বা শোশা নামে পরিচিত ছিল।বিশ্বের ক্ষুদ্রতম ক্ষুর যুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী মাউস ডিয়ার আঁকারে প্রায় বুনো খরগোশের মতো আবার দেখতে অনেকটা হরিণের মতো। তবে প্রথম দেখায় অনেকেই একে বিরল প্রজাতির খরগোশ বা হরিণ ভেবে ভুল করতে পারেন। এদের দেহের দৈর্ঘ্য ৫৭ সেন্টিমিটার , লেজের দৈর্ঘ্য ২.৫ সেমি। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক শোসার ওজন প্রায় ৭ পাউন্ড ।এদের আছে বেশ কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে। প্রজাতি ভেদে কোন কোনটি আঁকারে আরও বড় হতে পারে। এরা নিশাচর প্রাণী। রাতের বেলা খাবার সন্ধান বা ঘোরাফেরা করে। দিনের বেলা আড়ালে লুকিয়ে থাকে, তাই সহজে মানুষের চোখে সহজে ধরা পড়ে না । এরা উদ্ভিদভোজী তবে কেউ কেউ পোকামাকড়, মাছ-কাঁকড়াও খায়।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ৩৪ বছর আগে বাংলাদেশে এর দেখা মিললেও বিলুপ্তি ঘোষণার প্রায় ৩০ বছর পর সম্প্রতি এদের দেখা মিলেছে ভিয়েতনামে। ত্রিশ বছর পূর্বে মনে করা হয়েছিল মাউস ডিয়ার ভিয়েতনাম থেকেও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ভিয়েতনামে এই প্রাণীটির নাম Silver-backed Chevrotain or Mouse deer। ভিয়েতনামের উত্তর পশ্চিমের বনে সাম্প্রতিক এই প্রাণীটি ক্যামেরা ট্র্যাপে ধরা পরে। ভারতেও প্রাণীটির দেখা পাওয়া যায়। ভারতীয় মাউস ডিয়ারের বৈজ্ঞানিক নাম Indian spotted chevrotain (Moschiola indica)।
মাউস ডিয়ার নিয়ে সুন্দরবনের আদি প্রত্নতত্ত্ব ও বন্যপ্রাণী গবেষক ওয়াইল্ডটিমের কর্মী ইসমে আজম বলেছেন, আমাদের বাংলাদেশেও ‘মাউস ডিয়ার’ ছিল বা মতান্তরে আছে। আমি বাংলাদেশের সেই ‘মাউস ডিয়ার’ এর প্রথম তথ্য পেয়েছিলাম আমার মায়ের কাছে।
তিনি বলেন, শুনেছি রংপুর অঞ্চলে ১৯৮৫ সালে শেষ এই প্রাণীটি দেখা গিয়েছিল। রংপুর অঞ্চলে নাকি এই প্রাণীটিকে শোস বা শোশা বলা হতো। কেউ কেউ আবার খরগোশকেও শোস বা শোশা বলে। দেখতে খরগোশের আঁকারের তবে পায়ে ছাগলের মতো ক্ষুর আছে। বাংলাদেশের বৃহত্তর যশোর অঞ্চলেও এদের উপস্থিতির উল্লেখ্য পাওয়া যায়। স্থানীয় ভাবে এদের ছাগুলে লাফা বলা হতো বা হয়। সাধারণত খরগোশকে স্থানীয় ভাবে যশোর অঞ্চলে লাফা বলা হয়। কিন্তু এই প্রাণীটির পা ছাগলের মতো হওয়ায় একে ছাগুলে লাফা বলা হয়।
ইসমে আজম আরও বলেন, বয়স্ক লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জেনেছিলাম, বুনো খরগোশের পা বিড়ালের মতো হওয়ায় তা নাকি মুসলিমদের জন্য হারাম। তবে যে খরগোশের পা ক্ষুর যুক্ত সেই খরগোশ খাওয়া হালাল। আমার কয়েকজন বন্ধু এই ছাগুলে লাফা দেখেছেন এমনকি ধরে খেয়েছে বলে দাবিও করেছিল। তবে এখনো এর প্রমাণ পাইনি। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে প্রাণীটির একাধিক আঞ্চলিক নাম থাকলেও বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর তালিকায় কোথাও এই প্রাণীটির উল্লেখ্য করা হয়নি বা অনুসন্ধান হয়েছে কিনা জানা নেই।
ইসমে আজম ইতিমধ্যে সুন্দরবনসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিলুপ্ত প্রাণীর জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছেন এবং নতুন নতুন তথ্য সংগ্রহে কাজ করে যাচ্ছেন । মাউস ডিয়ার বা শোস নিয়েও তথ্য সংগ্রহ করছেন বলে জানিয়েছেন এই গবেষক।